করাচি থেকে ফের জাহাজ – পাশাপাশি, বাংলাদেশের নৌ পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, শেখ হাসিনার সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট চুক্তিটি তারা পর্যালোচনা করছে। এটিকে বাতিল করার পক্ষে তারা
দ্বিগুণ পণ্য, করাচি থেকে ফের জাহাজ এল চট্টগ্রামে
শুক্রবার ফের পাকিস্তানের করাচি থেকে বিপুল পণ্য নিয়ে জাহাজ পৌঁছেছে চট্টগ্রাম বন্দরে। মাসখানেক আগে প্রথম বার জাহাজটি পাকিস্তানি পণ্য নিয়ে আসার পরে মুহাম্মদ ইউনূস সরকার নির্দেশ জারি করেছিল, ওই দেশ থেকে আসা পণ্য আর যাচাই (ফিজ়িক্যাল চেকিং) করার দরকার নেই— কাগজে যা লেখা থাকবে, সেটাই মানা হবে। পাকিস্তানি পণ্যকে এই বিশেষ সুবিধা দেওয়ার পরে এ বার করাচি থেকে আগের বারের দ্বিগুণ সংখ্যক কন্টেনার নিয়ে চট্টগ্রাম পৌঁছেছে জাহাজটি।

পাশাপাশি, বাংলাদেশের নৌ পরিবহণ দফতর জানিয়েছে, শেখ হাসিনার সময়ে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে স্বাক্ষরিত মেরিটাইম ট্রান্সপোর্ট চুক্তিটি তারা পর্যালোচনা করছে। এটিকে বাতিল করার পক্ষে তারা। এই চুক্তিতে ভারতের নানা বন্দর থেকে বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও মংলা বন্দরে জলযানে পণ্য পরিবহণের কথা রয়েছে। ইউনূস সরকার মনে করছে, ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে পণ্য পৌঁছে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশের পরিকাঠামো ব্যবহার করতেই ভারত এই চুক্তি করেছে। বাংলাদেশের কী লাভ হচ্ছে, তা খতিয়ে দেখে চুক্তিটি বাতিল করা হবে।
নভেম্বরে এই জাহাজটিই দুবাই থেকে করাচি হয়ে চট্টগ্রাম এসেছিল। চট্টগ্রামে খালাস হওয়া ৩৭০টি কন্টেনারের মধ্যে ২৯৭টি এসেছিল করাচি থেকে, বাকিগুলি দুবাইয়ের। এ বার করাচি থেকে এসেছে ৬৯৯টি কন্টেনার। বন্দর সূত্রে খবর, পাকিস্তান থেকে চিনি, আলু, পোশাক শিল্পে ব্যবহৃত কাপড় ও রাসায়নিক এবং ডলোমাইটের মতো খনিজ আনা হয়েছে শুক্রবার চট্টগ্রামের বহির্সমুদ্রে নোঙর করা ‘এম ভি ইউয়ান জিয়াং ফা ঝং’ জাহাজটিতে।
আদতে চিনা মালিকানাধীন জাহাজটি রবিবার কর্ণফুলি নদীতে চট্টগ্রামের মূল বন্দরে ঢুকে মাল খালাস করে ইন্দোনেশিয়া চলে যাবে। গত বার একটি মহল থেকে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছিল, জাহাজে ভোগ্যপণ্যের নামে বাংলাদেশে এই আমলে সক্রিয় হয়ে ওঠা জঙ্গিদের জন্য অস্ত্রশস্ত্র আনা হয়েছে। তবে, সরকার তা অস্বীকার করেছিল।

শেখ হাসিনা সরকারকে উচ্ছেদের পরে বাংলাদেশে ইউনূসের অন্তর্বর্তী সরকার এক দিকে যেমন ভারত-বিরোধিতা তুঙ্গে তুলেছে, পাকিস্তানের সঙ্গে সুসম্পর্ক গড়তেও তৎপর হয়েছে। গত শনিবারই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেট বৈঠকে পাকিস্তানের সঙ্গে এত দিন বন্ধ থাকা শিক্ষা, গবেষণা, সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া যোগাযোগ চালু করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার কায়রোয় ডি-৮ সম্মেলনে পাক প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ় শরিফের সঙ্গে পার্শ্ববৈঠকে বাংলাদেশের প্রধান উপদেষ্টা ইউনূস দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক উন্নয়নের নজির হিসেবে এই জাহাজ যোগাযোগের বিষয়টি উল্লেখ করেছিলেন।
তবে সংবাদ মাধ্যমের খবর, ভারত থেকে আমদানি করা চিনি দাম চড়িয়ে বাংলাদেশকে রফতানি করছে পাকিস্তান। অর্থাৎ ভারত থেকে আমদানি করলে চিনির যা দাম পড়ত, তার চেয়ে বেশি দামে ইউনূস সরকার পাকিস্তান থেকে তা আমদানি করছে, যার পরিবহণ ব্যয়ও লাগছে বেশি। বাংলাদেশেই প্রশ্ন উঠেছে, এ ভাবে হয়তো দেউলিয়া হতে বসা পাকিস্তানকে সাহায্য করা হচ্ছে, কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ কেন বেশি দামে চিনি কিনবে? আলুর ক্ষেত্রেও বিষয়টি একই বলে অভিযোগ উঠেছে।

ঢাকার বণিকসভা সূত্রের খবর, পাকিস্তান থেকে পণ্য আনার জন্য ব্যবসায়ীদের উপরে চাপও দেওয়া হচ্ছে। ফলে এক মাসে এই বরাত দ্বিগুণ হয়েছে। জাহাজটি লিজ় নিয়ে চালানো সংস্থাটি জানিয়েছে— চাহিদা এতটাই বেড়েছে, এই রুটে আরও একটি জাহাজ চালানোর কথা ভাবছে তারা।
আরও পড়ুন…