আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় চট্টগ্রাম জেলার অভ্যুদয়।

চট্টগ্রাম জেলার অভ্যুদয়:-
১৯৫১ সালের ১৬-১৯ মার্চ চট্টগ্রামের হরিখোলার মাঠে ৪ দিনব্যাপী সংস্কৃতি সম্মেলনে আবদুল করিম সাহিত্য বিশারদ সভাপতির যে ভাষণটি প্রদান করেন সেটি পূর্ব বাংলার স্বাধিকার চিন্তা ও জাতির সাংস্কৃতিক ধারাকে বেগবান করে তোলে। ঐ ভাষণে তিনি বলেন, ‘মানুষে মানুষে বিভেদ আছে সত্য। এই বিভেদকে জয় করাই শক্তি। সংস্কৃতি ঐক্যের বাহন, বিভেদের চামুণ্ডা নয়।’
১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলনের চূড়ান্ত আন্দোলন-সংগ্রামের তুঙ্গপর্বে চট্টগ্রামের এই সাংস্কৃতিক আন্দোলন দেশব্যাপী লেখক-বুদ্ধিজীবী ও সংস্কৃতিকর্মীদের ব্যাপক অনুপ্রেরণা দেয়। এই সম্মেলনের প্রভাবে চট্টগ্রামে গণতান্ত্রিক ও শ্রমজীবী মানুষের আন্দোলনও জোরদার হয় এবং পাকিস্তানের শাসক শোষকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ প্রবল হয়ে ওঠে।
মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর পর ১৯৫২ সালের ২৭ জানুয়ারি খাজা নাজিমউদ্দিন ‘উর্দুই হবে পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’-এ ঘোষণা দিলে সারা পূর্ব বাংলায় বিক্ষোভ শুরু হয়। চট্টগ্রামে ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও হরতাল পালিত হয়। আন্দরকিল্লায় আওয়ামী লীগ কার্যালয়ে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। তরুণ সাহিত্যিক মাহবুব-উল-আলম চৌধুরীকে আহ্বায়ক, আওয়ামী মুসলিম লিগ চট্টগ্রাম জেলার সাধারণ সম্পাদক এম এ আজিজ ও রেল শ্রমিক নেতা চৌধুরী হারুনর রশিদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।

কমিটিতে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ক্লাব, যুব সম্প্রদায়, সাংস্কৃতিক সংগঠন ও শ্রমজীবী সংগঠনের প্রতিনিধিরা অন্তর্ভুক্ত হন। চট্টগ্রামে ছাত্র-ছাত্রীদের ভূমিকাও ছিলো উল্লেখযোগ্য, ৫২ সালের ফেব্রুয়ারি মাসের প্রথম দিকে ভাষা আন্দোলনকে বেগবান করতে সর্বদলীয় ছাত্র সংগ্রাম পরিষদ গঠন করা হয়। আবদুল্লাহ আল হারুনকে আহ্বায়ক, মোহাম্মদ আলী ও ফরিদ উদ্দিন আহমদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করা হয়।
চট্টগ্রামের ছাত্র-ছাত্রীরা আন্দোলনে ব্যাপক ভূমিকা রাখেন। ভাষা আন্দোলনের ডাক চট্টগ্রামের গ্রামে-গঞ্জে ছড়িয়ে দেওয়ার কাজে রাজনৈতিক ও ছাত্র নেতৃত্বের পাশাপাশি রাজনীতিসচেতন শিল্পী, সংস্কৃতিকর্মী ও তরুণ লেখকরা বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখেন। তারা চট্টগ্রাম শহর ও গ্রামাঞ্চলে গণসংগীত, কবিগান ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ভাষা আন্দোলনের মর্মবাণী ও পূর্ব বাংলার মানুষের জাতীয়তাবাদী ও স্বাধিকার চেতনা ছড়িয়ে দেন।
১৯৭১ সালে মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের প্রাক্কালে ২৩ ও ২৪ মার্চ সোয়াত জাহাজ থেকে পাকিস্তানিরা অস্ত্র নামানোর বিরুদ্ধে শ্রমিক জনতার রক্তক্ষয়ী প্রতিরোধ গড়ে তোলে। ‘সোয়াত’ জাহাজ থেকে অস্ত্র লুট করে চট্টগ্রামের খালাসিরা বিরাট অবদান রাখেন। মহান স্বাধীনতা যুদ্ধের ঘোষণা প্রচারে কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।

আরও পড়ুনঃ
