চট্টগ্রাম জেলার বিখ্যাত খাবার

আমাদের আজকের আলোচনার বিষয় চট্টগ্রাম জেলার বিখ্যাত খাবার।

চট্টগ্রাম জেলার বিখ্যাত খাবার:-

মেজবানি-গোশত, কালাভুনা, শুটকি, মধুভাত, বেলা বিস্কুট, দুরুস, বাকরখানি, লক্ষিশাক, গরুর গোস্ত ভুনা, ফেলন ডাল, বিরিয়ানি, আফলাতুন হালুয়া, তালের পিঠা, নোনা ইলিশ প্রভৃতি চট্টগ্রামের নিজস্ব ঐতিহ্যবাহী খাবারের অন্তর্ভূক্ত। পর্তুগিজরা ১৫২৮ সালের দিকে চট্টগ্রামে এসে গোড়াপত্তন করে। যদিও মুঘল বিজয়ের পরে ১৬৬৬ সালে চলে যায়।

মেজবানি গোশত:-

মেজবান (ফার্সি: میزبان‎‎) বা মেজবানি (ফার্সি: میزبانی‎‎) বাংলাদেশের বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের বহুমাত্রিক ঐতিহ্যবাহী একটি ভোজের অনুষ্ঠান। চট্টগ্রামের পার্শ্ববর্তী নোয়াখালী অঞ্চলে মেজবানি জেয়াফত নামে বহুল প্রচলিত, ফার্সি ভাষায় যার অর্থ “ভোজ” বা “ভোজসভা”।

কারো মৃত্যুর পর কুলখানি, মৃত্যুবার্ষিকী, শিশুর জন্মের পর আকিকা, জন্মদিবস উপলক্ষে, ব্যক্তিগত সাফল্য, নতুন কোনো ব্যবসা আরম্ভ, নতুন বাড়িতে প্রবেশ, পরিবারে আকাঙ্ক্ষিত শিশুর জন্ম, বিবাহ, খৎনা, মেয়েদের কান ছেদন এবং ধর্মীয় ব্যক্তির মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে মেজবানির আয়োজন করা হয়। এছাড়া নির্দিষ্ট উপলক্ষ ছাড়া বা কোনো শুভ ঘটনার জন্যও মেজবান করা হয়।

ঐতিহাসিকভাবে মেজবানি একটি ঐতিহ্যগত আঞ্চলিক উৎসব যেখানে অতিথিদের সাদা ভাত এবং গরুর মাংস খাওয়ার জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। মেজবান অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণ সাধারণত প্রতিবেশীদের এবং আশেপাশের লোকদের জন্য উন্মুক্ত থাকে। তবে শহরাঞ্চলে নিমন্ত্রণপত্র ছাপিয়ে অতিথিদের মাঝে বিলি করা হয়। ঐতিহ্যগতভাবে মেজবানি অনুষ্ঠান সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত চলে, তবে আধুনিক কালে সন্ধ্যা থেকে রাত পর্যন্তও ভোজনের উৎসব চলতে দেখা যায়।

 

চট্টগ্রাম জেলার বিখ্যাত খাবার
ইউরোপিয়ান ক্লাব – চট্টগ্রাম জেলা

 

কালাভুনা:-

কালাভুনা (চাঁটগাঁইয়া: হালা ভুনো) গরু বা খাসির মাংস দিয়ে তৈরী চট্টগ্রামের রন্ধনশৈলীর একটি ঐতিহ্যবাহী মাংসের তরকারি যা বর্তমানে সমগ্র বাংলাদেশেই বিখ্যাত ও জনপ্রিয়। চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী কালাভুনা রান্না করতে প্রয়োজন হয় অনেক রকমের মসলা। হরেক রকম মসলার সংমিশ্রণে রান্না করার ফলে মাংস ভুনায় কালো রং আসে বলেই এর নাম দেওয়া হয়েছে কালাভুনা।

মেজবান ছাড়াও বিয়ে, ঈদ বা রমজানে সাহরি বা ইফতারেও কালাভুনা একটি পছন্দের খাবারে পরিণত হয়েছে। সাধারণত ভাত, পরোটা, নান রুটি কিংবা রুটির সাথে কালাভুনা খাওয়া হয়।

 

গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

মধুভাত:-

মধুভাত একধরনের শীতকালীন মিষ্টান্ন খাবার যা চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খাবারের একটি। মূলত চাল, নারকেল, দুধ এবং চিনির সমন্বয়ে এটি তৈরি করা হয়। মধুভাতের প্রধান বৈশিষ্ট্য হল এই ভাত রাতে রান্না করে, পরদিন সকালে পরিবেশন করা হয় এবং খেতে হয় খালি পেটে।

আরেকটি বিশেষত্ব হল এই শর্করা জাতীয় খাবার দীর্ঘক্ষণ ঢেকে রাখার ফলে গাঁজন প্রক্রিয়ায় এতে কিছুটা অ্যালকোহল উৎপাদিত হয়, ফলে মধুভাত খাবার পর ঝিমুনি আসে। এই কারণে চট্টগ্রামে এর জনপ্রিয়তা রয়েছে। তবে ছয় থেকে আট ঘণ্টা বা অধিক সময় ধরে গাঁজন প্রক্রিয়ায় রাখা হলে এতে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয় যা শরীরের জন্য ক্ষতিকর।

 

চট্টগ্রাম জেলার বিখ্যাত খাবার
কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র – চট্টগ্রাম জেলা

 

বেলা বিস্কুট:-

বেলা বিস্কুট চট্টগ্রাম অঞ্চলের ঐতিহ্যবাহী এবং উপমহাদেশের প্রথম বিস্কুট, যা সারা বাংলাদেশ জুড়ে জনপ্রিয়। এটি গোলাকার, আকারে বড় এবং সাধারণ বিস্কুটের তুলনায় তুলনামূলক শক্ত হবার কারণে শুরু থেকে চায়ে ডুবিয়ে এই বিস্কুট খাবার প্রচলন ঘটে। ১৫০ বছর ধরে জনপ্রিয় বেলা বিস্কুট চট্টগ্রামের মানুষসহ অনেকের বিকেলের চায়ের সঙ্গী। বেলা বিস্কুটের বিশেষত্ব হল এটি মাটির তৈরি তন্দুর বা চুলায় বানানো হয়। এটি যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়ায় রপ্তানি করা হয়।

আরও পড়ুনঃ

Leave a Comment