চট্টগ্রামের প্রথম এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চলাচলের জন্য বিভিন্ন যানবাহনের ক্ষেত্রে আগের চেয়ে কম টোল নির্ধারণ করে নতুন প্রস্তাব করা হয়েছে। প্রকল্পটির বাস্তবায়নকারী সংস্থা চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (সিডিএ) প্রস্তাবের পর চলতি বছরের শুরুতে গৃহায়ন ও গর্ণপূর্ত মন্ত্রণালয় যে টোল হার নির্ধারণ করেছিল তা বেশি বলা হচ্ছিল।
চট্টগ্রাম এক্সপ্রেসওয়ের টোল হার কমানোর প্রস্তাব
২৮ অক্টোবর সিডিএ’র নবগঠিত বোর্ডের প্রথম সভায় নতুন প্রস্তাবের জন্য টোল হার নির্ধারণ করা হয়। সেই প্রস্তাব গত সপ্তাহে গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) গণমাধ্যমকে এসব তথ্য জানিয়েছেন এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক ও চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের নির্বাহী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান।
তিনি বলেন, “গত ২৮ আগস্ট থেকে এক্সপ্রেসওয়ে দিয়ে পরীক্ষামূলক যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে। বর্তমানে যানবাহন থেকে কোনো টোল আদায় করা হচ্ছে না। আগে যে টোল হার মন্ত্রণালয় অনুমোদন দিয়েছিল, তা থেকে কমিয়ে পুনরায় নির্ধারণের জন্য প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে। নতুন টোলের বিষয়টি অনুমোদন হওয়ার পর টোল আদায়ের জন্য ঠিকাদার নিয়োগ দেওয়া হবে। এরপর যানবাহন থেকে টোল আদায় কার্যক্রম শুরু হবে।”
তিনি আরও জানান, “বর্তমানে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ৯টি র্যাম্পের কাজ চলমান আছে। ৯টির কাজ দ্রুত শেষ করার চেষ্টা করছি আমরা।”
পুনর্নির্ধারণ করা টোল প্রস্তাবে ন্যূনতম দূরত্বে প্রাইভেট কার, এসইউভি, মাইক্রোবাস, পিকআপ, বাস, মিনিবাস, চার চাকার ট্রাক ও কভার্ড ভ্যানে আগের চেয়ে কম টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে।এছাড়া সর্বোচ্চ দূরত্বেও পিকআপ, বাস ও কাভার্ড ভ্যানে কম টোল আদায়ের কথা বলা হয়েছে প্রস্তাবে।

পাশাপাশি নগরীর জিইসি বা টাইগার পাস মোড় থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আগ্রাবাদ বা ফকিরহাটে নামা এবং নিমতলা বা আগ্রাবাদ থেকে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে লালখান বাজার বা টাইগার পাসে নামা, এই অংশে ট্রেইলার চলাচল করতে না দেওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। তবে বাকি অংশে ট্রেইলার চলাচলের জন্য টোল প্রস্তাব করা হয়েছে।
নতুন প্রস্তাবিত টোল হার
নতুন টোল হারের প্রস্তাবনায় বলা হয়, জিইসি, সিআরবি, আগ্রাবাদ থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে সিইপিজেড, সিমেন্ট ক্রসিং, কেইপিজেড, সি-বিচে নামা গাড়িগুলোর ক্ষেত্রে মোটরসাইকেল ১৫, অটোরিকশা (৩ চাকা) ৩০, প্রাইভেটকার ৮০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ১৫০, মিনিবাস ২০০, বাস ২৮০, ট্রাক (৪ চাকা) ২০০, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০, কাভার্ডভ্যান ৪৫০ এবং ট্রেইলার ৪৫০ টাকা। তবে ট্রেইলারের টোল নির্ধারণ করা হলেও ওঠানামায় নিষেধ রাখা আছে।
সি-বিচ, কেইপিজেড, সিইপিজেড থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে নিমতলা, আগ্রাবাদ, টাইগারপাস, লালখানবাজারে নামা গাড়িগুলোর টোলহার মোটরসাইকেল ১৫, অটোরিকশা ৩০, প্রাইভেটকার ৮০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, পিকআপ ১৫০, মিনিবাস ২০০, বাস ২৮০, ট্রাক (৪ চাকা) ২০০, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০ ও কাভার্ডভ্যান ৪৫০ টাকা।

অপরদিকে, নগরের জিইসি, টাইগারপাস থেকে এক্সপ্রেসওয়েতে উঠে আগ্রাবাদ, ফকিরহাট নামা গাড়িগুলোর টোল মোটরসাইকেল ১০, অটোরিকশা ২০, প্রাইভেটকার ৫০, জিপ ৭০, মাইক্রোবাস ৯০, পিকআপ ১৩০, মিনিবাস ১৮০, বাস ২৫০, ট্রাক (৪ চাকা) ১৮০, ট্রাক (৬ চাকা) ৩০০, কাভার্ডভ্যান ৪৫০ টাকা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনসহ সকল সংস্থার যানবাহন টোল দিয়েই চলাচল করবে।
আগের টোল হার
গত ১২ ফেব্রুয়ারি গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ে সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। সেখানে মোটরসাইকেল, ট্রেইলার ও সিএনজি অটোরিকশা এই তিন ধরনের গাড়ি বাদ দিয়ে টোল চূড়ান্ত করা হয়। ওই সময় প্রাইভেটকারের টোল ১০০, জিপ ১০০, মাইক্রোবাস ১০০, মিনিবাস ২০০, বাস ৩০০, ট্রাক (৪ চাকা) ২০০ টাকা ও কাভার্ডভ্যানের জন্য ৫০০ টাকা করে টোল নির্ধারণ করে অনুমোদন দেয় মন্ত্রণালায়।
তখন এই টোলের হার বেশি দাবি করে নগরবাসীর মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। টোল কমানোর পাশাপাশি মোটরসাইকেল এবং সিএনজি অটোরিকশা চলাচলের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানানো হয়।

সিডিএর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগের প্রস্তাবে শুধু এক জায়গায় অর্থাৎ লালখান বাজার থেকে পতেঙ্গা পর্যন্ত এটির টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে নতুন প্রস্তাবে ৩টি জায়গায় ওঠানামায় টোল আদায়ের প্রস্তাব করা হয়েছে। এমনকি নতুন প্রস্তাবে ১২টি যানবাহনের আলাদা টোল হার নির্ধারণ করা হয়েছে।
আরও পড়ুন…