মীরসরাই উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

মীরসরাই উপজেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা।

১৩৪০ সালে সুলতান ফখরুদ্দিন মোবারক শাহ চট্টগ্রাম অধিকার করে এ অঞ্চলে মুসলিম শাসন প্রতিষ্ঠা করেন। পরবর্তীতে গৌড় সুলতান আলাউদ্দিন হোসেন শাহ ও নাসিরউদ্দিন নুসরাত শাহের আমলে পরাগল খাঁ ও ছুটি খাঁ এ অঞ্চলের শাসনকর্তা ছিলেন। এর পরে দিল্লীর সম্রাট শেরশাহের ভাই নিজাম শাহ এখানকার শাসনকর্তা ছিলেন। তাঁর নামানুসারে নিজামপুর পরগণার নামকরণ হয় এবং সমগ্র মীরসরাই এলাকা নিজামপুর পরগণার অন্তর্ভুক্ত হয়। ষোড়শ শতকের শুরু থেকে এই অঞ্চল বাংলা সাহিত্যচর্চার অন্যতম কেন্দ্র ছিল।

মীরসরাই উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

১৫৮০ থেকে ১৬৬৬ সাল পর্যন্ত অধিকাংশ সময় এই অঞ্চল আরাকানীদের শাসনে ছিল। সুবেদার শায়েস্তা খাঁ এর পুত্র বুজুর্গ উমেদ খাঁ ফেনী নদী পার হয়ে বর্তমান মীরসরাই থানার যে স্থানে সৈন্যদল নিয়ে অবতরণ করেন, সে স্থানের নামকরণ হয় বুজুর্গ উমেদনগর। তাঁর চট্টগ্রাম বিজয়ের মধ্য দিয়ে এই অঞ্চল স্থায়ীভাবে মুঘলদের শাসনে চলে যায়। ইংরেজ শাসনামলের শেষদিকে চট্টগ্রামের বিপ্লবীদের তৎপরতার অন্যতম কেন্দ্র ছিল মীরসরাই উপজেলার দুর্গাপুর ও করেরহাট এলাকা।

মীরসরাই মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলী

১৯৭১ সালের ২০ এপ্রিল ক্যাপ্টেন অলি আহমদের নেতৃত্বে মীরসরাই সদরের দক্ষিণে ফেনাফুনি ব্রিজের পাশে মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে পাকবাহিনীর প্রচণ্ড লড়াই হয়। যুদ্ধে পাকবাহিনীর প্রায় ১০০ সৈন্য নিহত হয়। এছাড়াও শুভপুর সেতু, হিঙ্গুলী সেতু, অছি মিয়ার সেতু ও মস্তাননগরসহ গোটা এলাকায় পাকবাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের তুমুল লড়াই সংঘটিত হয়।

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন
  1. বধ্যভূমি: ৫টি (মীরসরাই ওয়ারলেস, তালবাড়িয়া, লোহারপুল, মস্তাননগর হাসপাতাল ও ঝুলন্ত ব্রিজ)
  2. গণকবর: ১টি (করেরহাট বাজার)
  3. স্মৃতিস্তম্ভ: ১টি (হিজুলী ব্রিজ)

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

মীরসরাই উপজেলা নামকরণ

বর্তমান মীরসরাই এলাকায় মোগল আমলে একটি সামরিক ঘাঁটি ছিল। ঘাঁটিটি মেহমান সরাই নামে পরিচিত। সেখানে মীর সাহেব নামে এক মুসলিম সৈনিক মারা যায়। তাঁর নামে এই থানার নামকরণ মীরের সরাই বা মীরসরাই করা হয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

মীরসরাই এর অবস্থান ও সীমানা

মীরসরাই উপজেলার আয়তন ৪৮২.৮৯ বর্গ কিলোমিটার (১,১৯,৩২৪ একর)। চট্টগ্রাম জেলা সদর থেকে ৬০ কিলোমিটার উত্তরে ২২°৩৯´ থেকে ২২°৫৯´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°২৭´ থেকে ৯১°৩৯´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে এ উপজেলার অবস্থান। মুহুরি নদী ফেনী জেলা এবং নোয়াখালী জেলা থেকে এটিকে আলাদা করেছে। একে চট্টগ্রাম এর প্রবেশদ্বার বলা যায়। এর পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলা; দক্ষিণে সীতাকুণ্ড উপজেলা; পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও সন্দ্বীপ উপজেলা, নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা, ফেনী জেলার সোনাগাজী উপজেলা এবং উত্তরে ফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলা, ছাগলনাইয়া উপজেলা ও ভারতের ত্রিপুরা প্রদেশ অবস্থিত।

চট্টগ্রাম জেলার মীরসরাই থানা ১৬টি ইউনিয়ন নিয়ে ১৯১৭ সালের ১৫ জুলাই প্রতিষ্ঠিত হয়। ঐ সালের ২১ সেপ্টেম্বর গেজেট বিজ্ঞপ্তি প্রকাশিত হওয়ার পর ১৯১৮ সালের ১ জানুয়ারী থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মীরসরাই থানার কার্যক্রম চালু হয়। মীরসরাই থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালের ১৫ এপ্রিল তৎকালীন বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদের শাসনামলে এবং উপজেলা কার্যক্রম শুরু হয় ঐ বছরেরই ৬ অক্টোবর।

বর্তমানে মীরসরাই উপজেলায় ২টি থানা এবং থানাদ্বয়ের আওতাধীন ২টি পৌরসভা ও ১৬টি ইউনিয়ন রয়েছে।

জোরারগঞ্জ থানার আওতাধীন ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন।

 

মীরসরাই উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

 

পৌরসভা:
  • বারৈয়ারহাট
ইউনিয়নসমূহ:
  1. ১নং করেরহাট
  2. ২নং হিঙ্গুলী
  3. ৩নং জোরারগঞ্জ
  4. ৪নং ধুম
  5. ৫নং ওসমানপুর
  6. ৬নং ইছাখালী
  7. ৭নং কাটাছড়া
  8. ৮নং দুর্গাপুর

মীরসরাই থানার আওতাধীন ১টি পৌরসভা ও ৮টি ইউনিয়ন।

পৌরসভা:
  1. মীরসরাই
ইউনিয়নসমূহ:[৬]
  1. ৯নং মীরসরাই
  2. ১০নং মিঠানালা
  3. ১১নং মঘাদিয়া
  4. ১২নং খৈয়াছড়া
  5. ১৩নং মায়ানী
  6. ১৪নং হাইতকান্দি
  7. ১৫নং ওয়াহেদপুর
  8. ১৬নং সাহেরখালী

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মীরসরাই উপজেলার মোট জনসংখ্যা ৩,৯৮,৭১৬ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৮৭,৩২৩ জন এবং মহিলা ২,১১,৩৯৩ জন। মোট পরিবার ৭৯,৫৪৫টি।[৩] মোট জনসংখ্যার ৮৫% মুসলিম, ১৩% হিন্দু এবং ২% বৌদ্ধ ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী।

২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী মীরসরাই উপজেলার সাক্ষরতার হার ৫৫.১%; পুরুষ ৫৭.১%, মহিলা ৫৩.৩%। এ উপজেলায় ৫টি কলেজ (সহপাঠ), ১টি গার্লস কলেজ, ১টি কামিল মাদ্রাসা, ৪টি ফাজিল মাদ্রাসা, ২টি আলিম মাদ্রাসা, ২০টি দাখিল মাদ্রাসা, ৪০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় (সহশিক্ষা), ৬টি বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ২টি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ১৪৫টি সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ৩৮টি বেসরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

মীরসরাই উপজেলায় যোগাযোগের প্রধান সড়ক ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাড়ক ও ঢাকা-চট্টগ্রাম রেলপথ। এছাড়া উপজেলায় ২৩০ কিলোমিটার পাকারাস্তা, ১১৯ কিলোমিটার আধা-পাকারাস্তা, ১৪৩৫ কিলোমিটার কাঁচারাস্তা, ১৬ কিলোমিটার রেলপথ, ৪টি রেলস্টেশন ও ১১ নটিক্যাল মাইল নৌপথ রয়েছে।

মীরসরাই উপজেলায় মোট জমির পরিমাণ ৪৪,৫৬৭ হেক্টর। এর মধ্যে ফসলী জমি ২৫,৯১১ হেক্টর। ধান এই অঞ্চলের প্রধান ফসল। এই স্থান কৃষি কাজ করার জন্য উৎকৃষ্ট। এছাড়া অন্যান্য কৃষি ফসলের মধ্যে রয়েছে ডাল, আলু, বেগুন, শাকসবজি ইত্যাদি।

একবিংশ শতাব্দীর শুরু থেকে এই অঞ্চলে শিল্প কারখানা গড়ে উঠে। ইছাখালী, মঘাদিয়া, ও সাহেরখালী ইউনিয়নের সাগর সংলগ্ন চরে এবং আরো জমি নিয়ে সর্বমোট ৩৫ হাজার একর জায়গার উপর দেশের সর্ববৃহৎ শিল্পনগর গড়ে তোলা হচ্ছে যা “মীরসরাই ইকোনমি জোন” বর্তমানে “বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগর” নামে পরিচিত।

 

মীরসরাই উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

 

Leave a Comment