সাতকানিয়া উপজেলা আয়তন: ২৮০.৯৯ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°০১´ থেকে ২২°১৩´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৫৭´ থেকে ৯২°১০´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে চন্দনাইশ উপজেলা, দক্ষিণে লোহাগাড়া (চট্টগ্রাম) উপজেলা, পূর্বে বান্দরবান সদর উপজেলা, পশ্চিমে বাঁশখালী ও আনোয়ারা উপজেলা।
জনসংখ্যা ৩৩৮৫৬৩; পুরুষ ১৬৮০০৭, মহিলা ১৭০৫৫৬। মুসলিম ৩০১৬১৪, হিন্দু ৩৩২৮৭, বৌদ্ধ ৩৫, খ্রিস্টান ৩৫২৮ এবং অন্যান্য ৯৯। এ উপজেলায় মগ আদিবাসী জনগোষ্ঠীর বসবাস রয়েছে।

জলাশয় প্রধান নদী: সাঙ্গু।
প্রশাসন সাতকানিয়া থানা গঠিত হয় ১৯১৭ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।
তথ্যঃ

সাতকানিয়া উপজেলা আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,
প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ সাতকানিয়া ও সোনাকানিয়া ইউনিয়নের দারোগা মসজিদ ও ডেপুটি মসজিদ (পঞ্চদশ শতাব্দী)। ত্রয়োদশ শতাব্দীর মূর্তি সম্বলিত মুদ্রা ও ঠাকুর দীঘি (সাতকানিয়া), কোতওয়াল দীঘি (সোনাকানিয়া), শিবমন্দির (ঢেমশা), বোমং হাট গির্জা (বাজালিয়া), হিন্দুপাড়া মন্দির (কাঞ্চনা)।
মুক্তিযুদ্ধের ঘটনাবলি ১৯৭১ সালের ৮ আগষ্ট সাতকানিয়া বাজার ও সতিপাড়া থেকে ১৭ জন নিরীহ লোককে ধরে নিয়ে হত্যা করে। পাকবাহিনী দক্ষিণ সাতকানিয়ার বানিয়াপাড়ায় লুটপাট করে এবং বেশকিছু বাড়িঘরে অগ্নি সংযোগ করে। পরবর্তীতে পাকবাহিনী ২৪ জন নিরীহ লোককে হত্যা করে।
মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন স্মৃতিস্তম্ভ ১।
ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ১০২৫, মন্দির ৬১, বৌদ্ধ মন্দির ৮, মাযার ১৮। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: ধর্মপুর কালু গাজী সিকদার মসজিদ, ভোয়ালিয়া পাড়া মাঝের মসজিদ, আজগর শাহ (রঃ) মাযার, সাতকানিয়া সদর শ্রী শ্রী দক্ষিণেশ্বরী কালীবাড়ি, ঢেমশা চৌধুরী বাড়ি মন্দির, কাঞ্চনা কালীবাড়ি, সোনাকানিয়া বৌদ্ধ বিহার, ঢেমশা বড়ুয়া পাড়া গির্জা।

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৪৬.২%; পুরুষ ৫০.০%, মহিলা ৪২.৬%। কলেজ ৫, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৩৯, প্রাথমিক বিদ্যালয় ১০৪, মাদ্রাসা ৮০। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: হেলার আদর্শ ডিগ্রী কলেজ, সাতকানিয়া সরকারি কলেজ (১৯৪৯), সাতকানিয়া আদর্শ মহিলা কলেজ, বাংলাদেশ রাইফেলস্ ট্রেনিং একাডেমি, এ কে বি সি ঘোষ ইনস্টিটিউট (১৯২৯), আমিলাইশ কাঞ্চনা বঙ্গ ঘোষ ইনিস্টিটিউট (১৯২৯), সাতকানিয়া আদর্শ পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০২), ঢেমশা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯০৭), রূপকানিয়া আদর্শ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৮০), সাতকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯০), মধ্য-রূপকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৮৯০), মনোয়াবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯০৫), রূপকানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯১০), গারাংগিয়া ইসলামিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯২০), সাতকানিয়া আলিয়া এম ইউ মাদ্রাসা, দারুল ইহসান মহিলা দাখিল মাদ্রাসা।
পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী আশার প্রতীক, অবলুপ্ত: স্বাধীনতা দিবস স্মরণিকা (২০০৩)।
সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ৬, অডিটোরিয়াম ১, প্রেসক্লাব ১, সিনেমা হল ১, সাংস্কৃতিক সংগঠন ৫, খেলার মাঠ ৩০।
বিশেষ আকর্ষণ হলুদিয়া প্রান্তিক লেক, আলিশা ডেসটিনি প্রজেক্ট ও কেওচিয়া বন গবেষণা প্রকল্প।
জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ৩৫.৬৪%, অকৃষি শ্রমিক ৪.২৭%, শিল্প ০.৫৬%, ব্যবসা ২০.৩১%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.০৬%, চাকরি ১৪.৭১%, নির্মাণ ১.৭৭%, ধর্মীয় সেবা ০.৩৮%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৬.১৯% এবং অন্যান্য ১২.১১%।
কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৯.০৫%, ভূমিহীন ৫০.৯৫%। শহরে ৪৩.১৯% এবং গ্রামে ৫০.০১% পরিবারের কৃষিজমি রয়েছে।
প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, সরিষা, চীনাবাদাম, কলাই, হলুদ, তুলা, শাকসবজি।
বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি আখ, ভুট্টা, সুপারি।
প্রধান ফল-ফলাদি আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, লিচু, পেঁপে, পেয়ারা, আমড়া, নারিকেল, ডালিম।
মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৬, গবাদিপশু ১২, হাঁস-মুরগি ৩০০, নার্সারী ১০ (মৎস্য)।
যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৭৭ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৯২.১৬ কিমি, কাঁচারাস্তা ৬১৯.৭৪ কিমি; নৌপথ ৩৯ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, ঘোড়ার গাড়ি, গরুর গাড়ি।
শিল্প ও কলকারখানা চালকল, আটাকল, বরফকল, করাতকল, টিম্বার ইন্ডাস্ট্রিজ, ওয়েল্ডিং কারখানা।
কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, তাঁতশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, সূচিশিল্প, দারুশিল্প, বাঁশের কাজ, বেতের কাজ, সেলাই কাজ, পাটের কাজ, উলের কাজ, নকশি কাঁথা, জাল তৈরি।
হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৩০, মেলা ৮। সাতকানিয়া সদর হাট, গরিঙ্গা হাট, ডেপুটি হাট, দেওয়ান হাট, কেরানী হাট, বোমাং হাট, বাংলা হাট, বাংলা বাজার এবং বারুণী মেলা, পরীনির্বাণ মেলা, শাক্যমুনী মেলা, মির্জাখীল মহরম মেলা ও মক্কারো বলীখেলা উলেখযোগ্য।
প্রধান রপ্তানিদ্রব্য কলা, পেয়ারা, চীনাবাদাম, আলু, তুলা, বাঁশ ও বেতের তৈরি জিনিসপত্র।
বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৪৪.৪৩% (গ্রামে ৪১.৯৩%এবং শহরে ৫৯.৬৭%) পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।
পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৯১.৫৩%, পুকুর ১.৮৭%, ট্যাপ ০.৫৭% এবং অন্যান্য ৬.০৩%।
স্যানিটেশন ব্যবস্থা উপজেলার ৪৭.৩২% (গ্রামে ৪৫.১৮% এবং শহরে ৬০.৩৩%) পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৩৯.১৮% (গ্রামে ৪০.৪৬% এবং শহরে ৩১.৪৩%) পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ১৩.৫০% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।
স্বাস্থ্যকেন্দ্র এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ১, উপস্বাস্থ্য কেন্দ্র ৫, পরিবার পরিকল্পনা কেন্দ্র ১৭, কমিউনিটি স্বাস্থ্য কেন্দ্র ৬, হাসপাতাল ১।
প্রাকৃতিক দুর্যোগ ১৯৭৬ ও ১৯৯১ সালের ঘূর্ণিঝড়ে এ উপজেলার ঘরবাড়ি, গবাদিপশু, গাছপালা ও ফসলের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়।
