সীতাকুণ্ড উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

সীতাকুণ্ড উপজেলা বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার অন্তর্গত একটি উপজেলা যা ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। এটি চট্টগ্রাম জেলার ১৫টি উপজেলার, বাংলাদেশের প্রশাসনিক ব্যবস্থার দ্বিতীয় স্তর, একটি। এটি চট্টগ্রাম বিভাগের অধীন চট্টগ্রাম জেলার মধ্যে একটি এবং চট্টগ্রাম জেলার উত্তরে অবস্থিত। চট্টগ্রাম নগরীর ৯ কি.মি. উত্তরে রাজধানী ঢাকা থেকে ২১৯ কি.মি.দক্ষিণে – ৩৫ কি.মি. দৈর্ঘ্য বিশিষ্ট গিরিসৈকতের মিলন কেন্দ্র বার আউলিয়ার পূণ্যভূমিতে সীতাকুন্ড থানার অবস্থান। এই উপজেলর উত্তরে মিরসরাই ও ফটিকছড়ি উপজেলা, দক্ষিণে পাহাড়তলী থানা, পূর্বে ফটিকছড়ি ও হাটহাজারী উপজেলা এবং পাঁচলাইশ থানা, পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও সন্দ্বীপ উপজেলা অবস্থিত। সীতাকুন্ড উপজেলায় দেশের প্রথম ইকোপার্ক অবস্থিত, পাশাপাশি বিকল্প শক্তি প্রকল্প, বিশেষ করে বায়ু শক্তি এবং ভূ-তাপীয় শক্তি প্রকল্প অবস্থিত।

সীতাকুণ্ড উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

সীতাকুন্ড বাংলাদেশে মানব বসতির প্রাচীনতম একটি স্থান। এর ইতিহাসের বেশিরভাগ সময়, সীতাকুন্ডের পূর্বদিক মিয়ানমারের বিভিন্ন বৌদ্ধ শাসক এবং পশ্চিমে বাংলার মুসলিম শাসকরা পর্যায়ক্রমে শাসন করেছিলেন। অষ্টম শতাব্দীর একটি সংক্ষিপ্ত সময়ের জন্য ভারতের পাল বংশের শাসকরা সীতাকুন্ড শাসন করেছিল। সীতাকুন্ডের পূর্বাঞ্চলে শাসকরা আরাকান রাজ্য, ম্রাক ইউ রাজবংশ, আরাকানীয় জলদস্যু এবং পৌত্তলিক রাজ্য থেকে এসেছিলেন। পশ্চিমের শাসকরা বাংলার সুলতানি এবং বাংলার মোগল প্রদেশ (সুবা) থেকে এসেছিলেন। ১৬শ ও ১৭শ শতকে পর্তুগীজরা এই অঞ্চলে ইউরোপীয় শাসন ষোষণা করে, যারা জলদুস্যদের সাথে শাসন করে। ১৮শ ও ১৯শ শতকে এই অঞ্চল বিট্রিশ রাজের অধীনের শাসিত হয়েছিল, যারা সীতাকুণ্ডকে চট্টগ্রাম জেলার বাকী অংশের সাথে একীভূত করেছিলেন। সীতাকুন্ডের বর্তমান সংসদ্য সদস্য হলেন দিদারুল আলম।

 

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

 

সীতাকুণ্ড উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

সীতাকুন্ডের অর্থনৈতিক উন্নয়ন মূলত ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক এবং রেলপথ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত। সীতাকুন্ড মূলত একটি কৃষি প্রধান এলাকা হলেও এখানে বিশ্বের বৃহত্তম জাহাজ ভাঙ্গা শিল্প রয়েছে। এই শিল্পের বিরুদ্ধে শ্রমিকদের অধিকার, বিশেষত কাজের সুরক্ষা অনুশীলন এবং শিশুশ্রম সম্পর্কিত বিষয়ে অবহেলা করার অভিযোগ উঠেছে। এটির বিরুদ্ধে পরিবেশের ক্ষতি করারও অভিযোগ পাওয়া গেছে, বিশেষ করে মাটি দূষণের।বন নিধন, গণহারে মাছ ধরা এবং ভূগর্ভস্থ জল দূষণ সীতাকুন্ডের স্বাভাবিক বাস্তুতন্ত্রুকে হুমকির সম্মুখীন করছে। উপজেলাটি ভূমিকম্প, ঘূর্ণিঝড় এবং জলোচ্ছাসের মতো প্রাকৃতিক ক্ষতির জন্যও সংবেদনশীল। সীতাকুন্ড বাংলাদেশের সবচেয়ে সক্রিয় সিসমিক ফল্ট লাইন সীতাকুন্ড-টেকনাফ ফল্টে অবস্থিত।

সীতাকুন্ড বহু ইসলামী, হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মীয় স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। এখানে ২৯২টি মসজিদ, ৫০টি মন্দির, ৩টি বৌদ্ধ মঠ, ৮টি মাযার রয়েছে। এখানাকার উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় স্থানগুলোর মধ্যে বার এ আউলিয়া (বার আউলিয়া), শাহজাহানী শাহ মাজার, চন্দ্রনাথ মন্দির, পস্থিশালা বৌদ্ধ বিহার, সীতাকুন্ড শংকর মঠ, বিদর্শনরাম বিহার (পণ্ডিত প্রজনালোক মহাস্থবির কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত), হামমাদ্যর মসজিদ (সুলতান গিয়াসউদ্দিন মাহমুদ শাহ কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত) বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।

প্রাচীন নব্যপ্রস্তর যুগে সীতাকুণ্ডে মানুষের বসবাস শুরু হয় বলে ধারণা করা হয়। এখান থেকে আবিষ্কৃত প্রস্তর যুগের আসামিয় জনগোষ্ঠীর হাতিয়ার গুলো তারই স্বাক্ষর বহন করে।

 

সীতাকুণ্ড উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

 

ভারতীয় পুরাতত্ত্ববিদ রাখালদাস বন্দ্যোপাধ্যায় তার বাংলা ইতিহাস (সংখ্যা ১, ১৯১৪) নামক গ্রন্থে লিখেন, ১৮৮৬ সালে শিলীভূত কাঠ থেকে তৈরীকৃত একধরনের কাধঁযুক্ত পাথর আবিষ্কৃত হয়।[৫][৬] ১৯১৭ সালে, ব্রিটিশ খনিজবিদ ড. জে. কগিন ব্রাউন আরো বেশকিছু প্রাগৈতিহাসিক পাথর উন্মোচিত করেন।[৭] প্রচুর পরিমাণে নুড়িও পাওয়া গেছে, তবে সেগুলা প্রাগৈতিহাসিক সরঞ্জামগুলির নির্মাণে ব্যবহৃত হয়েছিল কিনা তা প্রত্নতাত্ত্বিকেরা নির্ধারণ করেননি।[৫]

ইতিহাস থেকে যতটুকু জানা যায়, ৬ষ্ঠ ও ৭ম শতাব্দীতে সম্পূর্ণ চট্টগ্রাম অঞ্চল আরাকান রাজ্যের অধীনে ছিল। এর পরের শতাব্দীতে এই অঞ্চলের শাসনভার চলে যায় পাল সম্রাট ধর্মপাল এর হাতে (৭৭০-৮১০ খ্রিষ্টাব্দ)। সোনারগাঁও এর সুলতান ফখরুদ্দীন মুবারক শাহ্ (১৩৩৮-১৩৪৯ খ্রিষ্টাব্দ) ১৩৪০ খ্রিষ্টাব্দে এ অঞ্চল অধিগ্রহণ করেন। পরবর্তীতে ১৫৩৮ খ্রিষ্টাব্দে সুর বংশের শের শাহ্ সুরির নিকট বাংলার সুলতানি বংশের শেষ সুলতান গিয়াস উদ্দীন মুহাম্মদ শাহ্ পরাজিত হলে এই এলাকা আরাকান রাজ্যের হাতে চলে যায় এবং আরাকানীদের বংশধররা এই অঞ্চল শাসন করতে থাকেন।

পরবর্তীতে পর্তুগীজরাও আরাকানীদের শাসনকাজে ভাগ বসায় এবং ১৫৩৮ থেকে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দ পর্যন্ত এই অঞ্চল পর্তুগীজ ও আরাকানী বংশধররা একসাথে শাসন করে। প্রায় ১২৮ বছরের রাজত্ব শেষে ১৬৬৬ খ্রিষ্টাব্দে মোগল সেনাপতি বুজর্গ উম্মেদ খান আরাকানীদের এবং পর্তুগীজদের হটিয়ে এই অঞ্চল দখল করে নেন।

পলাশীর প্রান্তরে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের পর এই এলাকাটিও ইংরেজদের দখলে চলে যায়। পরবর্তীতে ১৯০৮ সালে স্বদেশী আন্দোলনের সময় এই অঞ্চলের কর্তৃত্ব স্বদেশীদের হাতে আসে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় এই এলাকাটি ২ নম্বর সেক্টরের অন্তর্ভুক্ত ছিল।

সীতাকুন্ডের নামকরণ নিয়ে বেশ কিছু কিংবদন্তী রয়েছে। হিন্দু সম্প্রদায়ের অনুসারীরা মনে করেন রামায়ণে বর্ণিত সীতা এখানে আগমন করেন এবং একটি কুন্ডে স্নান করেন।এই কারণে সীতাকুন্ডে নামের উৎপত্তি হয়েছে।[৮][৯] অন্য মতে রাম স্বয়ং তার স্ত্রী সীতার নামেই সীতাকুন্ড নামকরণ করেছিলেন। অন্য আরেক তথ্যমতে, দক্ষ রাজার মহাযজ্ঞের সময় শিব তার স্ত্রী সতীর শবদেহ খন্ড বিখন্ড করেন এবং তার নামানুসারে সীতারকুন্ড কালের বির্বতনে বিকৃত হয়ে সীতাকুন্ড ধারণ করে। অর্থাৎ হিন্দু ধর্মের পৌরাণিক উপাখ্যানে নারদ মুনির ভূমিকা সর্বজন বিদিত।

সীতাকুণ্ড উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

নারদ মুনির ভূমিকা থেকে স্পষ্ট হয় যে দক্ষরাজার কন্যা পার্বতী মা বাবার অগোচরে ভালবেসে বিয়ে করেন শিবকে, এতে রাজা ক্ষিপ্ত হয়ে ত্রিলোকের সবাইকে আমন্ত্রন জানান। সেখানে শিবকে অপদস্ত করার জন্য তার মূর্তি বানিয়ে রাজপ্রাসাদের তোরণের বাইরে প্রহরী হিসাবে রাখা হল। নারদ মুনি থেকে পার্বতী একথা জানতে পেরে নিজেই তা দেখতে গেলেন এবং লজ্জায় অপমানে দেহত্যাগ করলেন। পার্বতী বেচে নেই জেনে উম্মত্তপ্রায় শিব পার্বতীর মৃতদেহ মাথায় নিয়ে প্রলয় নাচন শুরু করেন। এক পর্যায়ে বাহান্ন খণ্ডে খন্ডিত পার্বতীর দেহ বাহান্ন স্থানে নিক্ষিপ্ত হয়ে বাহান্নটি তীর্থ কেন্দ্রের উদ্ভব হয়। তম্মধ্যে সীতাকুন্ডও একটি। সতী পার্বতীর উরুসন্ধীর অংশ এখানে নিক্ষিপ্ত হয়েছে বলে কথিত আছে।[১০]

প্রাচীন ধর্মগ্রন্থ ও ইতিহাস ঘাঁটলে জানা যায়, প্রাচীন কালে এখানে মহামুণি ভার্গব বসবাস করতেন। অযোদ্ধার রাজা দশরথের পুত্র রামচন্দ্র তার বনবাসের সময় এখানে এসেছিলেন। মহামুণি ভার্গব তারা আসবেন জানতে পেরে তাদের স্নানের জন্য তিনটি কুণ্ড সৃষ্টি করেন এবং রামচন্দ্রের এখানে ভ্রমণ কালে তার স্ত্রী সীতা এই কুণ্ডে স্নান করেন। এই কারণেই এখানকার নাম ‘সীতাকুণ্ড’ বলে অনেকের ধারণা।[১১] তবে হিন্দু ও তান্ত্রিক গ্রন্থগুলোতে সীতাকুন্ডের নাম সুস্পষ্ট নয়।

সীতাকুণ্ড উপজেলা ভূগোল

সীতাকুণ্ড উপজেলার ভৌগোলিক অবস্থান ২২.৬১৬৭° উত্তর ৯১.৬৬১১° পূর্ব। এটি ঢাকা-চট্টগ্রাম জেলার মহাসড়কের দুপাশে এবং চট্টগ্রাম জেলার উত্তরে অবস্থিত। এই উপজেলার মোট আয়তন ৪৮৩.৯৭ বর্গ কিমি, 

যার মধ্যে বনাঞ্চল রয়েছে ৬১.৬১ বর্গ কিলোমিটার বা ২৩.৭৯ বর্গ মাইল। এই উপজেলার সব্বোর্চ উচ্চতা চন্দ্রনাথ পাহাড়ে অবস্থিত, এটি চট্টগ্রাম জেলারও সর্বোচ্চ চূড়া, যা সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩৫২ মিটার (১,১৫৫ ফুট) উচ্চতায় অবস্থিত।সীতাকুণ্ডের কিছু অংশ নিচু পাহাড়ী রেঞ্জ দ্বারা আচ্ছাদিত, বাকি অংশটুকু উপকূলীয় সমভূমি।উত্তরে সর্বোচ্চ চূড়া হলো রাজবাড়ী টিলা ২৪৮মিটার (৮৯৯ ফুট) এবং সাজিধালা ২৪৪ মিটার (৮০১ ফুট), যা ক্রমান্বয়ে দক্ষিণে চট্টগ্রাম শহরের দিকে গিয়ে ৯২ মিটার (৩০২ ফুট) এর উচ্চতায় নেমে আসে।

সীতাকুন্ড শহর থেকে প্রায় ৫ কিলোমিটার (৩ মাইল) উত্তরে লাবনাখ্যা নোনতা গরম পানির ঝর্ণা, যা ভূ-তাপীয় শক্তির উৎস হিসাবেও প্রস্তাবিত হয়েছে। এটি বাংলাদেশের একমাত্র গরম পানির ঝর্ণাও বটে। এই উপজেলার পাহাড়ে দুইটি ঝর্ণা রয়েছে: সহস্রাধারা (হাজার ধারা) এবং সুপ্তাধারা (লুকানো স্রোত)। উভয় ঝর্ণাকে বাংলাদেশের জাতীয় ঐতিহ্য ফাউন্ডেশন কর্তৃক সুরক্ষা এবং সংরক্ষণের জন্য বিশেষ দৃষ্টিসম্পন্ন স্থান হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে।

বাংলাদেশের দক্ষিণ-পূর্ব অঞ্চলে অবস্থিত এই উপজেলাকে ঘিরে রয়েছে পাহাড় আর সমুদ্র। সীতাকুণ্ড উপজেলার পশ্চিমাংশ জুড়ে বঙ্গোপসাগর। এ উপজেলায় বহমান কোন নদী নেই।

সীতাকুণ্ড উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

সীতাকুন্ড ভূতাত্ত্বিক গঠন চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের সবচেয়ে পশ্চিম প্রান্তের অন্যতম ভূতাত্ত্বিক গঠন। এর উত্তরে ফেনী নদী, দক্ষিণে কর্ণফুলী নদী, পূর্বে হালদা নদী ও পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল রয়েছে। এই ভূতাত্ত্বিক গঠনটির দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০ কিলোমিটার ও প্রস্থ ৯০ কিলোমিটার। সীতাকুন্ড ভাঁজ একটি দ্রাঘিত, অপ্রতিসম, বক্সজাতীয় দ্বি-ভঙ্গাক্ষণত উত্তলভঙ্গ। ভাঁজটির অক্ষ রেখা উত্তর-উত্তরপূর্ব ও দক্ষিণ-দক্ষিণপূর্ব মুখে ধাবমান, যা আঞ্চলিক আয়ামের সাধারণ প্রবণতার সমান্তরাল। উত্তলভঙ্গটির উভয় পার্শ্বদেশ এর দ্বি-ভঙ্গাক্ষনত প্রকৃতির কারণে উত্তরে ফেনী নদী ও দক্ষিণে কর্ণফুলী নদীর পাললিক সমভূমিতে গিয়ে মিশেছে।

ভূতাত্ত্বিক গঠনটির একটি মৃদু নতিশীল পূর্বপার্শ্ব ও খাড়া নতিশীল পশ্চিম পার্শ্বদেশ রয়েছে, যা আকস্মিকভাবে পাললিক সমভূমি দ্বারা কর্তিত হয়েছে। এই কর্তন উত্তলভঙ্গের সাধারণ আয়ামের সমান্তরাল রেখায় ধাবমান একটি বড় বিচ্যুতির কারণে ঘটেছে। গঠনটির প্রকটিত পাললিক শিলা অনুক্রমে সার্বিক শিলালক্ষণে চট্টগ্রাম ও পাবর্ত্য চট্টগ্রামের অন্যান্য ভূতাত্ত্বিক গঠনের চাইতে কোন পার্থক্য নেই। অবশ্য চূনাপাথর এর ব্যতিক্রম। সীতাকুন্ড ভূতাত্ত্বিক গঠন বেলেপাথর, কর্দম শিলা ও পলি শিলার একটি পুরু পাললিক স্তরক্রম ধারণ করছে। প্রকটিত অবক্ষেপের মোট পুরুত্ব প্রায় ৬৫০০ মিটার।

সীতাকুণ্ড উপজেলার জনসংখ্যার উপাত্ত

২০০১ সালের আদমশুমারি অনুসারে, সীতাকুন্ডের জনসংখ্যা ছিল ২৯৮,৫২৮ জন যার মধ্যে ১৬৩,৫৬১ জন পুরুষ এবং ১৩৪,৯৬৭ জস মহিলা অর্থাৎ পুরুষ ও নারীর অনুপাত ছিল ১২১ঃ১০০ এবং ৫৫,৮৩৭টি খানা ছিল (গড় খানা প্রতি ৫.৩)। ঐ আদমশুমারী রিপোর্ট অনুযায়ী, উপজেলার প্রশাসনিক স্তরের গড় জনসংখ্যা ছিল ওয়ার্ড প্রতি ৪,০৭২, মহল্লা প্রতি ১,৬৬৬, ইউনিয়ন প্রতি ২৯,৮৫৩, মৌজা (রাজস্ব আদায়ের সর্বনিম্ন একক-এলাকা) প্রতি ৫,০৬০ এবং গ্রাম প্রতি ৫,০৬০ জন। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী সীতাকুণ্ড উপজেলার জনসংখ্যা ৩,৩৫,১৭৮ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১,৮২,২২৩ জন এবং মহিলা ১,৫২,৯৫৫ জন। এ উপজেলার ৮৬% লোক মুসলিম, ১৩% হিন্দু ও ১% অন্যান্য ধর্মাবলম্বী রয়েছে।

সীতাকুণ্ড অবস্থান ও সীমানা

চট্টগ্রাম মহানগরীর ৩৭ কিলোমিটার উত্তরে ২২°২২´ থেকে ২২°৪২´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৩৪´ থেকে ৯১°৪৮´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ জুড়ে এ উপজেলার অবস্থান। এর উত্তরে মীরসরাই উপজেলা; পূর্বে ফটিকছড়ি উপজেলা, হাটহাজারী উপজেলা ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের বায়েজিদ বোস্তামী থানা; দক্ষিণে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আকবর শাহ থানা ও পাহাড়তলী থানা এবং পশ্চিমে সন্দ্বীপ চ্যানেল ও সন্দ্বীপ উপজেলা অবস্থিত।

সীতাকুণ্ড উপজেলায মোট ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা নিয়ে গঠিত। ইউনিয়নগুলো হলো, ১নং সৈয়দপুর, ২নং বারৈয়াঢালা, ৩নং সীতাকুণ্ড (৩নং সীতাকুণ্ড ইউনিয়ন সম্পূর্ণ সীতাকুণ্ড পৌরসভার অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় ইউনিয়ন পরিষদ কার্যক্রম বর্তমানে বিলুপ্ত), ৪নং মুরাদপুর, ৫নং বাড়বকুণ্ড, ৬নং বাঁশবাড়িয়া, ৭নং কুমিরা, ৮নং সোনাইছড়ি, ৯নং ভাটিয়ারী, ১০নং সলিমপুর[২২] সীতাকুণ্ড থানা গঠিত হয় ১৯৭৯ সালে এবং ১৯৮৩ সালে থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয়। এ উপজেলার সলিমপুর ইউনিয়নের কিছু অংশ চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের আকবর শাহ থানার আওতাধীন। সলিমপুর ইউনিয়নের বাকি অংশ ও সীতাকুণ্ড পৌরসভাসহ এ উপজেলার অন্যান্য সকল ইউনিয়ন সীতাকুণ্ড মডেল থানার আওতাধীন।

স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় ১৯৯৮ সালের ১ জানুয়ারী তৎকালীন ৩নং সীতাকুণ্ড ইউনিয়নকে দ্বিতীয় শ্রেণীর (খ-শ্রেণী) পৌরসভায় রূপান্তরিত করে। সীতাকুণ্ড পৌরসভার আয়তন ২৮.৯১ বর্গ কিলোমিটার। এটি ৯টি ওয়ার্ডে বিভক্ত।

 

সীতাকুণ্ড উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

 

বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সীতাকুন্ডে সংসদীয় আসনটি বর্তমানে চট্টগ্রাম-৪ আসন হিসেবে চিহ্নিত। সীতাকুণ্ড উপজেলা এবং চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৯নং উত্তর পাহাড়তলী ও ১০নং উত্তর কাট্টলী ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এ আসনটি জাতীয় সংসদে ২৮১ নং আসন হিসেবে চিহ্নিত। বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভের পর অনুষ্ঠিত ১৯৭৩ সালের প্রথম জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই সীতাকুন্ড সংসদীয় আসনটি তৈরি করা হয়। তখন এই আসনটি চট্টগ্রাম-২ ও জাতীয়য় সংসদ ২৮২ নং আসন হিসেবে পরিচিত ছিল। কিন্তু ২০১৩ সালের ৩ জুলাই এ নির্বাচন কমিশন সচিবালয় কর্তৃক প্রকাশিত গেজেটে জাতীয় সংসদের পুন:নির্ধারিত নির্বাচনী এলাকা হিসেবে এই আসনটিকে চট্টগ্রাম-৪ ও জাতীয় সংসদ ২৮১ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।[২৩]

১৯৭৩ সালের প্রথম নির্বাচনে এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মোস্তাফিজুর রহমান সিদ্দিকী। ১৯৭৯ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এল কে সিদ্দিকী, ১৯৮৬ ও ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির মোহাম্মদ আইনুল কামাল, ১৯৯১ সালে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এল কে সিদ্দিকী, ফেব্রুয়ারি ১৯৯৬ তারিখে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এল কে সিদ্দিকী, জুন ১৯৯৬ তারিখে আওয়ামী লীগের এবিএম আবুল কাশেম সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

২০০১ সালের নির্বাচনে বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) এল কে সিদ্দিকী পুনরায় নির্বাচিত হন। ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এবিএম আবুল কাশেম পুনরায় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দিদারুল আলম এই আসন থেকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন।

Leave a Comment