পটিয়া উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

পটিয়া উপজেলা (চট্টগ্রাম জেলা)  আয়তন: ২৯৮.৬২ বর্গ কিমি। অবস্থান: ২২°১৩´ থেকে ২২°২১´ উত্তর অক্ষাংশ এবং ৯১°৪৭´ থেকে ৯২°০৭´ পূর্ব দ্রাঘিমাংশ। সীমানা: উত্তরে বোয়ালখালী উপজেলা এবং কোতোয়ালী, বাঁকলিয়া ও চাঁদগাঁও থানা, দক্ষিণে চন্দনাইশ ও আনোয়ারা উপজেলা, পূর্বে রাঙ্গুনিয়া ও চন্দনাইশ উপজেলা, পশ্চিমে চান্দগাঁও, কোতোয়ালী, ডবলমুরিং এবং বন্দর থানা।

জনসংখ্যা ৪৫৬২৭৫;  পুরুষ ২৩৮১৫৭, মহিলা ২১৮১১৮। মুসলিম ৩৭০২৩২, হিন্দু ৭৬৯৫৯, বৌদ্ধ ৬১৭, খ্রিস্টান ৮৩২৯ এবং অন্যান্য ১৩৮।

পটিয়া উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

জলাশয় প্রধান নদী: কর্ণফুলি; মুরারী ও চাঁন্দখালী খাল উল্লেখযোগ্য।

প্রশাসন পটিয়া থানা গঠিত হয় ১৯৫০ সালে এবং থানাকে উপজেলায় রূপান্তর করা হয় ১৯৮৩ সালে।

তথ্যঃ

পটিয়া উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

পটিয়া উপজেলা আদমশুমারি রিপোর্ট ২০০১,

প্রাচীন নিদর্শনাদি ও প্রত্নসম্পদ মুসা খান মসজিদ (১৬৫৮ খ্রি.), কুরা কাটনি মসজিদ (১৮০৬ খ্রি. হরিন খাইন), কালা মসজিদ (সতের শতক, কচুয়াই), আকবরিয়া জামে মসজিদ, সৈয়দ কুতুবের (রঃ) মাযার (বড়লিয়া), বুড়া গোঁসাইর মন্দির, জগন্নাথ মন্দির (সুচক্রদন্ডী), অন্নপূর্ণ মন্দির, জনার্দ্দন মন্দির, শিব মন্দির, বৌদ্ধ মঠ (হাইদগাঁও), বুদ্ধ পদচিহ্ন মন্দির (উনাইনপুরা)।

ঐতিহাসিক ঘটনাবলি বিশ শতকের তিরিশের দশকে কালারপোল সংঘর্ষে বিপ্লবী স্বদেশ রায় ইংরেজ সেনাদের গুলিতে নিহত হন এবং আহত দেবুপ্রসাদ, রজতসেন ও মনোরঞ্জন সেন আত্মসমর্পণ এড়াতে আত্মহত্যা করেন। ১৯৩৩ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি গড়লা গ্রামে ক্ষীরোদপ্রভা বিশ্বাসের বাড়িতে বিপ্লবী দলের অধিনায়ক মাস্টারদা সূর্যসেন ও কল্পনা দত্তসহ অনেকে আত্মগোপন করেছিলেন। এ সময় সূর্যসেন ও ব্রজেন্দ্রসেন ইংরেজ সৈন্যদের হাতে ধরা পড়েন। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে ধলঘাট যুদ্ধে ২০ থেকে ২৫ জন পাকসেনা নিহত হয়।

ক্যাপ্টেন করিমের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধারা ধলঘাট পুলিশ ফাঁড়িতে হামলা করলে পুলিশ আত্মসমর্পণ করে। পটিয়া মাদ্রাসা ও খানমোহনা স্টেশন সংলগ্ন রাজাকার ক্যাম্পে হামলা করলে ২ জন এবং কেলিশহর গোপাল পাড়ায় গেরিলা যুদ্ধে একজন রাজাকার নিহত হয়। পাকবাহিনীর দুটি বোমারু বিমান পটিয়া সদরে কয়েকদফা বোমা হামলা চালালে কিছুসংখ্যক বেসামরিক লোক হতাহত হয়। ৩ মে এ উপজেলার মোজাফফরাবাদ গ্রামে পাকবাহিনী অসংখ্য ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয় এবং নির্বিচারে গণহত্যা চালায়। ১৪ ডিসেম্বর পটিয়া স্বাধীন হয়।

google news
গুগোল নিউজে আমাদের ফলো করুন

 

মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচিহ্ন গণকবর ১।

ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান মসজিদ ৪৭৬, মন্দির ৩৭, গির্জা ২,  প্যাগোডা ১, বৌদ্ধ বিহার ২১, মাযার ১। উল্লেখযোগ্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান: মুসা খান মসজিদ, খিল্লা পাড়া ইন্নার মসজিদ, আল-জামিয়া ইসলামিয়া মসজিদ, টেগর পুনী মন্দির, রায় ভবনের মন্দির।

 

শিক্ষার হার, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড় হার ৫৯.৮১%; পুরুষ ৫৬.৩৩%, মহিলা ৪৭.১৬%। টিচার ট্রেনিং ইনস্টিটিউট ১, কলেজ ৮, মাধ্যমিক বিদ্যালয় ৪৯, মাদ্রাসা ১১। উল্লেখযোগ্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান: পটিয়া সরকারি ডিগ্রি কলেজ (১৯৬২), পটিয়া সরকারি কলেজ (১৯৬৭), হুলাইন ছালেহ্ নূর কলেজ (১৯৬৯), এ জে চৌধুরী কলেজ (১৯৭০), ধলঘাট স্কুল এন্ড কলেজ (১৯১৮), পটিয়া আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৪৫), চক্রশালা কৃষি উচ্চ বিদ্যালয় (১৮৫৭), আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫৭), আবদুস সোবহান রাহাত আলী উচ্চ বিদ্যালয় (১৯১৪), মোজাফফরাবাদ এন জে উচ্চ বিদ্যালয় (১৯২৯),  আবদুর রহমান সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় (১৯৫১), শশাংকমালা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় (১৯৩৫), শাহচান্দ আউলিয়া কামিল মাদ্রাসা (১৯২৮), আল জামেয়াতুল ইসলামিয়া (১৯৩৭), শিকলবাহা অহিদিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসা (১৮৯০)।

পত্র-পত্রিকা ও সাময়িকী অবলুপ্ত মাসিক: অভয়বাণী, শঙ্খ, দক্ষিণ চট্টলা রেছালত।

সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠান লাইব্রেরি ২, ক্লাব ৩৫০, নাট্যদল ৪, সিনেমা হল ৩, মহিলা সংগঠন ২।

দর্শনীয় স্থান খরণার চা বাগান ও পূর্ব হাইদগাঁওয়ের বনাঞ্চল।

পটিয়া উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

জনগোষ্ঠীর আয়ের প্রধান উৎস কৃষি ২৫.২৫%, অকৃষি শ্রমিক ৫.৪২%, শিল্প ১.০৪%, ব্যবসা ১৮.৯৮%, পরিবহণ ও যোগাযোগ ৪.৫৮%, চাকরি ১.৫২%, নির্মাণ ০.৬৭%, ধর্মীয় সেবা ২২.৩৪%, রেন্ট অ্যান্ড রেমিটেন্স ৩.৮৮% এবং অন্যান্য ১৬.৩২%।

কৃষিভূমির মালিকানা ভূমিমালিক ৪৪.০২%, ভূমিহীন ৫৫.৯৮%।

প্রধান কৃষি ফসল ধান, আলু, আদা, পান, শাকসবজি।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় ফসলাদি দেশীয় আউশ ধান, অড়হর, তিসি, কলাই।

প্রধান ফল-ফলাদিব কাঁঠাল, পেয়ারা, কাগজী লেবু, আনারস, তরমুজ, পেঁপে।

মৎস্য, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগির খামার মৎস্য ১৫, গবাদিপশু ৭৫, হাঁস-মুরগি ৮৬২, নার্সারি ১২৫।

যোগাযোগ বিশেষত্ব পাকারাস্তা ৫০ কিমি, আধা-পাকারাস্তা ৪২ কিমি, কাঁচারাস্তা ৫১০ কিমি; রেলপথ ১৬ কিমি; নৌপথ ১৬ নটিক্যাল মাইল।

বিলুপ্ত বা বিলুপ্তপ্রায় সনাতন বাহন পাল্কি, গরু ও ঘোড়ার গাড়ি।

শিল্প ও কলকারখানা তাপ-বিদ্যুৎ কেন্দ্র, বার্জ মাউন্টেড বিদ্যুৎ কেন্দ্র, ড্রাইডক ও ফিশিং বোট ডকইয়ার্ড, স্টিলমিল, সিমেন্ট ফ্যাক্টরি, টেক্সটাইল মিল, গার্মেন্টস ফ্যাক্টরি, পলিফোম ফ্যাক্টরি, প্লাস্টিক ইন্ডাস্ট্রিজ, সিলিংফ্যান ইন্ডাস্ট্রিজ, প্যাকেজিং ও বোর্ড, ফুড এন্ড স্পাইসেস, বরফকল, ম্যাচ ফ্যাক্টরি, সল্ট রিফাইনারি এন্ড ক্রাসিং, ধানকল, ময়দাকল, কেইপিজেড, বিসিক শিল্পনগরী, পশ্চিম পটিয়া শিল্প এলাকা।

কুটিরশিল্প স্বর্ণশিল্প, লৌহশিল্প, মৃৎশিল্প, তাঁতশিল্প, বুনন শিল্প, সূচিশিল্প, বাঁশ ও কাঠের কাজ।

হাটবাজার ও মেলা হাটবাজার ৪৫, মেলা ২০। থানাহাট, সফর আলি মুন্সির হাট ও মুন্সেফ বাজার এবং শ্রীমাই কোরাচেঙ্গী মেলা, আচারিয়া মেলা, সূর্যব্রত মেলা, রথযাত্রার মেলা, ঠেগরপুনি মেলা ও মাহিরা ক্ষেত্রপাল মেলা উল্লেখযোগ্য।

প্রধান রপ্তানিদ্রব্য  লবণ, পেয়ারা, লেবু, কাঁঠাল, আলু, শাকসবজি।

বিদ্যুৎ ব্যবহার এ উপজেলার সবক’টি ওয়ার্ড ও ইউনিয়ন পল্লিবিদ্যুতায়ন কর্মসূচির আওতাধীন। তবে ৫৫.৯৫% পরিবারের বিদ্যুৎ ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে।

পানীয়জলের উৎস নলকূপ ৮৭.৩৯%, ট্যাপ ০.৭৫%, পুকুর ৮.৯২% এবং অন্যান্য ২.৯৪%।

স্যানিটেশন ব্যবস্থা এ উপজেলার ৪৪.১৬% পরিবার স্বাস্থ্যকর এবং ৪৬.৫২% পরিবার অস্বাস্থ্যকর ল্যাট্রিন ব্যবহার করে। ৯.৩২% পরিবারের কোনো ল্যাট্রিন সুবিধা নেই।

প্রাকৃতিক সম্পদ  এ্যালুমিনিয়াম সমৃদ্ধ সাদা মাটি, শ্রীমাই খালের বালি, পটিয়ার বিস্তীর্ণ বনাঞ্চল।

স্বাস্থ্যকেন্দ্র উপজেলা স্বাস্থ্যকেন্দ্র ১, ইউনিয়ন পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ১৫, ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ক্লিনিক ৭, মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র ১, এনজিও পরিচালিত স্বাস্থ্য ক্লিনিক ১, পশু হাসপাতাল ১।

পটিয়া উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

Leave a Comment