বৈরাগ বাংলাদেশের চট্টগ্রাম জেলার আনোয়ারা উপজেলার অন্তর্গত একটি ইউনিয়ন। বৈরাগ ইউনিয়নের আয়তন ৪,০১৩ একর (১৬.২৪ বর্গ কিলোমিটার)। ২০১১ সালের পরিসংখ্যান অনুযায়ী বৈরাগ ইউনিয়নের মোট জনসংখ্যা ৩০,৫৪৫ জন। এর মধ্যে পুরুষ ১৫,৭৫৯ জন এবং মহিলা ১৪,৭৮৬ জন। মোট পরিবার ৫,৬৬২টি।
আনোয়ারা উপজেলার উত্তর-পশ্চিমাংশে বৈরাগ ইউনিয়নের অবস্থান। উপজেলা সদর থেকে এ ইউনিয়নের দূরত্ব প্রায় ৭ কিলোমিটার। এ ইউনিয়নের দক্ষিণে বারশত ইউনিয়ন ও বটতলী ইউনিয়ন, পূর্বে চাতরী ইউনিয়ন, উত্তরে কর্ণফুলী উপজেলার বড় উঠান ইউনিয়ন এবং পশ্চিমে কর্ণফুলী নদী ও চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ৪১নং দক্ষিণ পতেঙ্গা ওয়ার্ড অবস্থিত।
বৈরাগ ইউনিয়ন | আনোয়ারা উপজেলা | চট্টগ্রাম জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ

বৈরাগ ইউনিয়ন আনোয়ারা উপজেলার আওতাধীন ১নং ইউনিয়ন পরিষদ। এ ইউনিয়নের আংশিক (কর্ণফুলী তীরবর্তী অংশ) প্রশাসনিক কার্যক্রম চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্ণফুলী থানার আওতাধীন এবং বাকি অংশ আনোয়ারা থানার আওতাধীন। এটি জাতীয় সংসদের ২৯০নং নির্বাচনী এলাকা চট্টগ্রাম-১৩ এর অংশ। এটি ৫টি মৌজায় বিভক্ত। এ ইউনিয়নের গ্রামগুলো হল:
- বৈরাগ
- গুয়াপঞ্চক
- বদলপুরা
- মাঝের চর
- রাঙ্গাদিয়া
- বন্দর
ব্রিটিশ শাসনামলের আনুমানিক ১৯৪৩ সালে প্রথম মহকুমার অধীনে বর্তমান বৈরাগ এই ১টি গ্রাম নিয়ে বৈরাগ ইউনিয়ন গঠিত হয়। ঐ সময়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যানকে গ্রাম প্রেসিডেন্ট বলা হত। ১৯৫০ সালে পাকিস্তান শাসনামলে গ্রাম প্রেসিডেন্টের পদকে ইউনিয়ন চেয়ারম্যান পদবী ঘোষণা করা হয়। ১৯৫৪ সালে প্রথম গ্রাম প্রেসিডেন্ট হন ওছিউদ্দিন সরকার।

তারপর পর্যায়ক্রমে গোলাম হোসেন সরকার, সাদত আলী গ্রাম প্রেসিডেন্ট এর দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৬৭ সালে তৎকালীন পাকিস্তান মহকুমা জুরি বোর্ডের সদস্য ডাঃ রেয়াজ উদ্দিন সরকার প্রথম ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান মনোনীত হন এবং তিনিই মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে অত্র ইউনিয়নের চেয়ারম্যান ছিলেন। ১৯৮৫ সালে প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে তৎকালীন প্রশাসক আনোয়ারা ইউনিয়ন থেকে বৈরাগ গ্রামকে পৃথক করে বৈরাগ নামে আলাদা ইউনিয়ন গঠন করেন। বর্তমানে ৯টি ছোট বড় গ্রাম মিলিয়েই বৈরাগ-ইউনিয়ন পরিষদ।
বৈরাগ-ইউনিয়নের নাম নিয়ে দুটি জনশ্রুতি রয়েছে, পুর্বে বৈরাগ-ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রামেই হিন্দুদের আধিপত্য ছিল। রাধা রমন সিংহ ও আশু সিংহ ছিলেন বৈরাগ গ্রামের ধনাঢ্য ব্যক্তিদের মধ্যে অন্যতম। তারাই প্রথম বৈরাগ ইউনিয়ন নামের প্রস্তাবকারী ছিলেন।
অন্যটি হল উত্তর বন্দর, দক্ষিণ বন্দর, বদলপুরা, গুয়াপঞ্চক, আমানউল্লাহ পাড়া, মোহাম্মদপুর সহ আরও কয়েকটি গ্রাম নিয়ে একটি বড় জঙ্গল+পাহাড়ে বিভিন্ন মানুষের আনাগুনা থাকায় নাকি বৈরাগ নামকরণ করা হয়। তবে ঐ সময়ে নৌকাই ছিল বৈরাগ-ইউনিয়নে একমাত্র যোগাযোগ স্থাপনকারী বাহন।
২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বৈরাগ-ইউনিয়নের সাক্ষরতার হার ৬২.৭%। এ ইউনিয়নে ২টি স্কুল এন্ড কলেজ, ১টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৩টি মাদ্রাসা ও ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে।

শিক্ষা প্রতিষ্ঠান
- স্কুল এন্ড কলেজ
- কাফকো স্কুল এন্ড কলেজ
- মেরিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ
- মাধ্যমিক বিদ্যালয়
- গুয়াপঞ্চক উচ্চ বিদ্যালয়
- মাদ্রাসা
- উত্তর বন্দর নঈম উদ্দীন আল-কাদেরিয়া মাদ্রাসা
- গুয়াপঞ্চক সুমাইয়া মাদ্রাসা
- পূর্ব বৈরাগ আঞ্জুমানে আল-কাদেরিয়া মাদ্রাসা
- প্রাথমিক বিদ্যালয়
- উত্তর গুয়াপঞ্চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- উত্তর বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- গুয়াপঞ্চক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- দক্ষিণ বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- পশ্চিম বৈরাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- বদলপুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- বৈরাগ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- মধ্য বন্দর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- মেরিন একাডেমী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
- মোহাম্মদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়
বৈরাগ ইউনিয়নে যোগাযোগের প্রধান সড়ক শিকলবাহা-রায়পুর সড়ক। সব ধরনের যানবাহনে যোগাযোগ করা যায়। এছাড়া চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ১৪নং ও ১৫নং ঘাট দিয়ে এ ইউনিয়নে নৌপথে যোগাযোগের ব্যবস্থা রয়েছে। বৈরাগ ইউনিয়নে ৩৯টি মসজিদ, ১০টি ঈদগাহ ও ৯টি মন্দির রয়েছে। বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে চলেছে কর্ণফুলী নদী। বৈরাগ ইউনিয়নের প্রধান ৩টি হাট/বাজার হল চাতরী চৌমুহনী বাজার, মহালখান বাজার এবং দেয়াং বাজার।

আরও দেখুনঃ
গুইমারা উপজেলা | খাগড়াছড়ি জেলা | চট্টগ্রাম বিভাগ | বাংলাদেশ